চতুরাশ্রম প্রথা ঃ আর্য সমাজে শূদ্র ছাড়া বাকি তিনটি শ্রেণি চতুরাশ্রমের মধ্যে দিয়ে তাদের জীবন পরিচালনা করত। চতুরাশ্রম প্রথা চারটি স্তরে বিভক্ত ছিল। যথা - ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বাণপ্রস্থ ও সন্ন্যাস। ব্রহ্মচর্যের সময় আর্য বালকরা বিভিন্ন বিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জনের জন্য গুরুগৃহে বসবাস করত। গার্হস্থ্য জীবনে শিক্ষা লাভ শেষ করে আর্য যুবকরা ঘরে ফিরে এসে বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালন করত। বাণপ্রস্থ স্তরে পঞ্চাশোর্ধ আর্যরা সংসার জীবন শেষ করে নির্জনে ধর্ম চিন্তায় দিন কাটাত। শেষ আশ্রমটি হল সন্ন্যাস। এই স্তরে আর্য-বৃদ্ধরা সংসারের মায়া ত্যাগ করে লোকালয় থেকে দূরে ধ্যান-তপস্যা করে দিন কাটাত।
সমাজে নারীদের মর্যাদা ঃ ঋক বৈদিক যুগে সমাজে নারীদের অবস্থান উন্নত ছিল। বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েরা স্বাধীনতা পেট। নারীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা ছিল।
পোশাক ও অলংকার ঃ এসময় তুলো, পশম, মৃগচর্ম প্রভৃতি দিয়ে বস্ত্র তৈরি করা হত। রূপা, দামী পাথরের অলংকার এসময় ব্যবহার করা হত। নারীরা ফুলের মালা পড়তেও পছন্দ করত।
খাদ্য ও আমোদ-প্রমোদ ঃ আর্যরা দুধ, ফল, মাছ, মাংস প্রভৃতি খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করত। মাদকদ্রব্য হিসাবে ‘সোম’ ও ‘সুরা’ পান করা হত। নাচ, গান, শিকার প্রভৃতি ছিল আমোদ প্রমোদের অঙ্গ।
অর্থনৈতিক জীবন ঃ নিম্নে ঋক বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
পশুপালন ঃ আর্যদের প্রধান জীবিকা ছিল পশুপালন। গোরু, ঘোড়া, হাতি, ছাগল ভেড়া প্রভৃতি পশু আর্যরা পালন করত। গৃহপালিত পশুর মধ্যে গোরু ছিল প্রধান।
কৃষি ঃ পশুপালনের পরেই ছিল কৃষিকাজ। গম ও যব ছিল আর্যদের উৎপাদিত শস্য। কৃষিকাজে তারা বলদের ব্যবহার জানত ও জমিতে সেচের ব্যবস্থা ছিল।
বাণিজ্য ঃ এই সময় অর্থনীতির অপর একটি দিক ছিল বাণিজ্য। আর্যরা অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পাশাপাশি সামুদ্রিক বাণিজ্যেও লিপ্ত ছিল। পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল।
পরবর্তী বৈদিক যুগে সমাজজীবন ঃ পরবর্তী বৈদিক যুগে পেশাভিত্তিক বর্ণপ্রথা জাতিভিত্তিক ও বংশানুক্রমিক হয়ে পড়ে। এই সময় শূদ্র শ্রেণিকে অপবিত্র বলে মনে করা হত। পরবর্তী বৈদিক যুগে সমাজে নারীদের অবস্থার অবনতি ঘটে এবং তারা বাল্য বিবাহ, সতীদাহ প্রথা ও পণপ্রথার শিকার হয়।
পরবর্তী বৈদিক যুগে অর্থনৈতিক জীবন ঃ পরবর্তী বৈদিক যুগে কৃষির বিকাশ ঘটায় শিল্পের উন্নতি, বাণিজ্যের বিকাশ ও অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি ঘটে। এরফলে একদিকে নগরায়ণ শুরু হয়, রাজ্য ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে।
মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, ঋক বৈদিক যুগের তুলনায় পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্য সমাজ ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসে। ঋক বৈদিক যুগে নারীদের মর্যাদা থাকলেও পরবর্তী বৈদিক যুগে তা ক্ষুণ্ণ হয়। সমাজে বর্ণ ব্যবস্থা কঠোর হয়, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটে।
সংক্ষেপে ঋক্ বৈদিক যুগের আর্যদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক
ReplyDelete