সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করো

সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র -

ভারতে উপজাতি বিদ্রোহগুলির মধ্যে সবচেয়ে তীব্র ও ব্যাপকতার সাক্ষ্য বহন করেছিল ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা বিভিন্নজন বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। নিম্নে সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র বিশ্লেষণ করা হলো -

কৃষক বিদ্রোহ ঃ কিছু ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহের আগে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়ংকর কৃষক বিদ্রোহ বলে সমর্থন করেছেন। তবে কেবলমাত্র সাঁওতাল কৃষকেরাই নয়, এই বিদ্রোহে স্থানীয় তেলি, কর্মকার, কুমোর প্রভৃতি সম্প্রদায় ও পেশার মানুষ যোগদান করেছিল।

ধর্মীয় বিদ্রোহ ঃ আধুনিক ঐতিহাসিকদের মধ্যে কেউ কেউ সাঁওতাল বিদ্রোহকে ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া বিদ্রোহ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। সিধু-কানু ঘোষনা করেন যে, বিদেশীদের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহ ঈশ্বরের আদেশেই সংঘটিত করা হচ্ছে।

সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী বিদ্রোহ ঃ ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তনের ফলে যে সাম্রাজ্যবাদী শোষণ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা, তার বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তাই এই বিদ্রোহ কেবল জমিদার বা মহাজন বিরোধী বিদ্রোহ ছিল না, তা ছিল ব্রিটিশ বিরোধী এক গন বিদ্রোহ।

গণবিদ্রোহ ঃ ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে সাঁওতাল বিদ্রোহ গণবিদ্রোহের সমান ছিল। ড. কালিকিংকর দত্ত বলেছেন, বাংলা ও বিহারের ইতিহাসে এই বিদ্রোহ ছিল নবযুগের অগ্রদূত।

মূল্যায়ন ঃ সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও প্রকৃতিগতভাবে এটি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ক্ষেত্র গড়ে তুলেছিল। কারণ এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়েই পরবর্তীকালে সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য তারা উদ্যোগী হয়েছিল।

আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post