মুন্ডা বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র -
ছোটনাগপুর অঞ্চলের রাঁচি, মানভূম, সিংভূম প্রভৃতি অঞ্চলের মুন্ডা আদিবাসীরা ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে জমিদার, মহাজন ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করেছিল, তা মুন্ডা বিদ্রোহ বা মুন্ডা উলগুলান নামে পরিচিত। মুন্ডা বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে মুন্ডা বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র বিশ্লেষণ করা হলো -
আদিবাসী বিদ্রোহ ঃ মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল একটি আদিবাসী বিদ্রোহ। আদিবাসী মুন্ডাদের দ্বারা এই বিদ্রোহ পরিচালিত হয়েছিল।
কৃষক বিদ্রোহ ঃ নরহরি কবিরাজের মতে মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল একটি কৃষক বিদ্রোহ। আদিবাসী মুন্ডারা জঙ্গল পরিষ্কার করে, চাষযোগ্য জমি তৈরি করে তাতে চাষবাস করত। ব্রিটিশ সরকারের ভূমিরাজস্ব নীতি তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ফলে তারা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।
ব্রিটিশ বিরোধী গণসংগ্রাম ঃ মুন্ডা বিদ্রোহকে অনেকে ব্রিটিশ বিরোধী গণসংগ্রাম বলেও আখ্যায়িত করেছেন। কারণ মুন্ডারা তাদের এলাকা থেকে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করতে এই বিদ্রোহে যোগদান করেছিল।
ধর্মীয় বিদ্রোহ ঃ মুন্ডাদের এলাকায় খ্রিস্টান মিশনারিরা খ্রিস্টধর্ম প্রচার করত। এর বিরুদ্ধে মুন্ডারা ঐক্যবদ্ধ হয়ছিল। মুন্ডাদের নেতা বিরসা মুন্ডা নিজেকে ঈশ্বরের অবতার বলে ঘোষণা করেন এবং তিনি তাঁর ৬০০০ অনুগামীদের নিয়ে একটি সেনাবাহিনী গঠন করেন। বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে মুন্ডারা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়।
মূল্যায়ন ঃ মুন্ডা বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা গেলেও এই বিদ্রোহের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। কারণ মুন্ডা বিদ্রোহ থেকেই পরবর্তীকালে ওঁরাও-রা তানাভকৎ আন্দোলনে অনুপ্রেরণা লাভ করেছিল।
আরও পড়ুন ঃ