ফরাজি আন্দোলনে হাজি শরিয়ৎউল্লাহ ও মহম্মদ মহসিনের ভূমিকা -
ফরাজি আন্দোলনে দুজন উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন হাজি শরিয়ৎউল্লাহ এবং মহম্মদ মহসিন বা দুদু মিঞা। নিম্নে ফরাজি আন্দোলনের এঁদের ভূমিকা আলোচনা করা হল -
হাজি শরিয়ৎউল্লাহ -
হাজি শরিয়ৎউল্লাহ ছিলেন ফরাজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা।
পূর্ব জীবন ঃ হাজি শরিয়ৎউল্লাহ ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার বাহাদুরপুর গ্রামের জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি হুগলী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছিলেন। সেখানে তিনি আরবি ও ফারসি ভাষা শেখেন। এছাড়া মক্কায় গিয়ে ইসলামি ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও আইন সম্পর্কে পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন।
ফরাজি সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা ঃ শরিয়ৎ উল্লাহ ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ফরাজি নামে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আদর্শ প্রচার ঃ শরিয়ৎউল্লাহ প্রতিষ্ঠিত ফরাজি আন্দোলনের আদর্শ ছিল অমুসলমান আদর্শ বর্জন করে মুসলিম আদর্শ গ্রহণ করা এবং জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা।
মহম্মদ মহসিন বা দুদু মিঞা -
হাজি শরিয়ৎউল্লাহের মৃত্যুর পর ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তাঁর পুত্র মহম্মদ মহসিন বা দুদু মিঞা।
আন্দোলন ঃ মহম্মদ মহসিনের নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয়-সামাজিক আন্দোলন থেকে সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, জমি আল্লাহর দান, তাই জমিদারের খাজনা আদায়ের অধিকার নেই। তিনি 'ফরাজি খিলাফৎ' নামের একটি দক্ষ সংগঠন তৈরি করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলনের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল।
মৃত্যু ঃ দুদু মিঞার কার্যকলাপে বিরক্ত হয়ে জমিদার, নীলকর ও ইংরেজ সরকার জোটবদ্ধ হয়। তাঁকে বহুবার কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। অবশেষে নানা প্রকার ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর দুদু মিঞা মৃত্যুবরণ করেন।
মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, মুসলিম আদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে যে ফরাজি আন্দলন সংঘটিত হয়েছিল তাতে হাজি শরিয়ৎউল্লাহ ও মহম্মদ মহসিনের অবদান অনস্বীকার্য।