১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন ? অথবা, সাঁওতালরা দিকু'দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল কেন

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন ? / সাঁওতালরা দিকু'দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল কেন ? / সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ কি ছিল ? -

সাঁওতালরা ছিল কঠোর পরিশ্রমী শান্তিপ্রিয় এক কৃষিজীবী আদিবাসী সম্প্রদায়। সাঁওতাল-সহ বিভিন্ন উপজাতির মানুষদের কাছে মহাজন, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, খ্রিস্টান মিশনারি-সহ সকল প্রকার বহিরাগতদের পরিচয় ছিল দিকু নামে। ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দে রাজমহল পাহাড়ের প্রান্তদেশে দামিন-ই-কোহ অঞ্চলের সাঁওতালরা দিকুদের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল, তাকে সাঁওতাল বিদ্রোহ বলে। সাঁওতাল বিদ্রোহ নানা কারণে সংঘটিত হয়েছিল। নিম্নে সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করা হল -

সাঁওতালদের জমি হরণ ঃ সাঁওতালরা কঠোর পরিশ্রম করে দামিন-ই-কোহ অঞ্চলের পাথুরে ও জঙ্গলাকীর্ণ জমিকে চাষযোগ্য জমিতে পরিণত করেছিল। তাদের এই জমিগুলিতে জমিদাররা রাজস্ব ধার্য করেছিল। ফলে সাঁওতালদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

অত্যধিক হারে রাজস্ব আদায় ঃ ব্রিটিশ কোম্পানির সহযোগী জমিদাররা সাঁওতালদের কাছ থেকে অত্যধিক হারে ভূমিরাজস্ব আদায় করত। তাছাড়া জমিদার ও তাদের কর্মচারীরা নানা ধরনের উপশুল্ক আদায় করত। এইসব কর মেটাতে সাঁওতালরা নাজেহাল হয়ে যেত।

মহাজনদের শোষণ ঃ নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় নগদ অর্থে খাজনা দিতে হতো। সাঁওতালরা নগদ অর্থের জন্য মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হত। মহাজনরা ঋণ দেওয়ার সুযোগে ৫০% থেকে ৫০০%  হারে সুদ আদায় করত। এইভাবে মহাজনরা সাঁওতালদের নানা রকম কৌশলে শোষণ করতো।

বহিরাগত ব্যবসায়ীদের শোষণ ঃ বহিরাগত কিছু ব্যবসায়ী সাঁওতালদের সরলতার সুযোগে কেনারাম ও বেচারাম নামক ভুয়ো বাটখারার দ্বারা কম ওজনের মালপত্র করায় বিক্রয়ের মাধ্যমে সাঁওতালদের প্রতারণা করত।  এছাড়া বেশি দামে জিনিসপত্র বিক্রি করা, জোর করে দাম না দিয়ে বা স্বল্পমূল্যে ক্ষেতের ফসল কেনা ইত্যাদি নানা উপায়ে তারা সাঁওতালদের শোষণ করত।

ইংরেজ কর্মচারী ও ঠিকাদারদের অত্যাচার ঃ লর্ড ডালহৌসের আমলে রাজমহল, রামপুরহাট, ভাগলপুর প্রভৃতি অঞ্চলে রেল লাইনের কাজের জন্য বিভিন্ন ঠিকাদাররা আসে কর্মচারী সংগ্রহের জন্য। নামমাত্র মজুরিতে কাজ করানো, সাঁওতালদের হাঁস, মুরগি, ছাগল কেড়ে নেওয়া, এমনকি নারীদের সম্মানহানিতেও তারা পিছুপা হত না। ফলে সাঁওতালরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।

সাঁওতাল সমাজে ব্রিটিশ আইন প্রবর্তন ঃ সাঁওতালরা তাদের নিজস্ব নিয়মে চলতো। বাংলার ছোটলাট ফ্রেডরিক হ্যালিডের নির্দেশে সাঁওতালদের মধ্যে ব্রিটিশ আইন কার্যকর হয়। ফলে সাঁওতালদের চিরাচরিত উপজাতীয় সংগঠন ভেঙে পড়ে এবং তারা ক্ষুদ্ধ হয়।

অরণ্যের অধিকার ঃ উপনিবেশিক অরণ্য আইনের ফলে সাঁওতালরা অরণ্যের কাঠ, ফল ইত্যাদি ভোগ করা ও অবাধ প্রবেশের চিরাচরিত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post