সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ -
বাংলায় ১৭৬৩ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গিরি ও দশনামী সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী এবং মাদারি সম্প্রদায়ভুক্ত ফকিরদের নেতৃত্বে সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ পরিচালিত হয়েছিল। বিহারের আরা জেলা থেকে বিদ্রোহের সূচনা হয়, প্রথম সংঘর্ষ হয় ঢাকায়। ক্রমশ বিদ্রোহের আগুন মালদহ, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বিশেষ কিছু কারণে শেষপর্যন্ত এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল। নিম্নে সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করা হল -
অন্তঃদ্বন্দ্ব ঃ সন্ন্যাসী-ফকিরদের মধ্যে পারস্পরিক আত্মকলহের ফলে বিদ্রোহের মধ্যকার ঐক্যতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে তাদের অন্তঃদ্বন্দ্ব প্রকাশিত হয় এবং বিদ্রোহের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
সুযোগ্য নেতার অভাব ঃ ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলায় ইংরেজ সেনার গুলিতে আহত হয়ে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম নেতা মজনু শাহ প্রানত্যাগ করেন। এরপর মুসা শাহ, ভবানী পাঠক, চিরাগ আলী প্রমূখ ব্যক্তিরাও পরাজিত ও নিহত হন। ফলে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উপযুক্ত নেতার অভাবে তা ব্যর্থ হয়।
সামরিক কারণ ঃ ইংরেজদের উন্নত সামরিক বাহিনী ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের কাছে সন্ন্যাসী-ফকিরদের অস্ত্রসম্ভার ছিল নিতান্তই সামান্য। শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের দমননীতির ফলে এই বিদ্রোহের অবসান ঘটে।
অর্থনৈতিক কারণ ঃ বিদ্রোহ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হয় অর্থের। বিদ্রোহীরা অর্থের জন্য লুঠতরাজ ও ডাকাতি করত। অন্যদিকে ব্রিটিশ কোম্পানির অর্থ ভাণ্ডার ছিল পরিপূর্ণ।
বিভিন্ন আইন পাস ঃ ব্রিটিশ সরকার বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আইন পাস করে। এইসব আইনের মাধ্যমে বিদ্রোহীদের সম্পর্কে বিভিন্ন গোপন খবর দিতে কৃষক, প্রজা ও জমিদারদের বাধ্য করা হয়। বিদ্রোহীদের খবর না দেওয়াই সেই সময় অনেককে ফাসিও দেওয়া হয়েছিল।
অনভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনার অভাব ঃ বিদ্রোহ কিভাবে সফল করতে হয়, তার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা বা পরিকল্পনা বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারীদের ছিল না। তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে লক্ষ্যহীনভাবে এই বিদ্রোহ মুখ থুবড়ে পড়ে।
মূল্যায়ন ঃ উপরোক্ত কারণগুলির পাশাপাশি নেতৃত্বে দুর্বলতা, সাংগঠনিক শক্তির অভাব, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা প্রভৃতি সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার পথকে প্রশস্ত করেছিল।
আরও পড়ুন ঃ