টীকা লেখ ঃ ভিল বিদ্রোহ -
মধ্য ও পশ্চিম ভারতের অধিবাসী ছিল ভিল উপজাতির লোকেরা। তারা স্বাধীন ও স্বনির্ভর জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভিলরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। যা ভিল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
ভিল বিদ্রোহের কারণ ঃ
মাড়োয়ারি মহাজনদের শোষণ ঃ ভিলরা তাদের নানা প্রয়োজনে মাড়োয়ারি মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিত। মাড়োয়ারি মহাজনরা তাদের কাছ থেকে অত্যন্ত চড়া হারে সুদ আদায় করত। যার ফলে ভিলরা সর্বস্বান্ত হয়ে যেত।
ইংরেজদের খান্দেশ অধিকার ঃ ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার খান্দেশ অধিকার করে। ফলে ভিলরা এই অঞ্চলের পরিত্যাক্ত দুর্গ গুলিতে আর বসবাস করতে পারছিল না। ইংরেজরা সৈন্য রাখার জন্য দুর্গগুলি থেকে ভিলদের বিতাড়িত করে। যার জন্য ভিলরা ক্ষুব্ধ হয়।
কোম্পানির আধিপত্য স্থাপন ঃ ভিল অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়া ভিলদের চিরাচরিত আইন ও বিচার ব্যবস্থা বাতিল করে কোম্পানি নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা চালু করলে ভিলরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
ভূমি রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি ঃ ব্রিটিশ সরকার ভিল অধ্যুষিত এলাকায় ভূমি রাজস্বের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে থাকলে ভিলরা বিদ্রোহের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হয়।
বিদ্রোহের বিস্তার ঃ
ভিলরা অত্যাচারী ও শোষক মাড়োয়ারি মহাজনদের আক্রমণ করে। তারা মহাজনদের নাক, কান কেটে তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করে। ভিল বিদ্রোহ খান্দেশ, মালব, ধার প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল।
বিদ্রোহের নেতা ঃ
গ্রামের ভিল সর্দাররা এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল। খান্দেশে ভিল বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান নেতা ছিল শিউরাম। তিনি ছিলেন গ্রামের একজন কামার।
বিদ্রোহ দমন ঃ
ব্রিটিশ সরকার সর্বশক্তি দিয়ে ভিল বিদ্রোহ দমন করার চেষ্টা করলেও ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই বিদ্রোহ চলেছিল।
মূল্যায়ন ঃ ভিল বিদ্রোহ ব্রিটিশ ও মহাজনবিরোধী বিদ্রোহ হিসাবে স্মরণীয় হয়ে আছে। এই বিদ্রোহ শোষণ থেকে মুক্তি লাভের প্রতিবাদস্বরূপ আদিবাসী আন্দোলনের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।