ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে সংঘটিত কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ গুলির কারণ কি ছিল

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে সংঘটিত কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ গুলির কারণ -

ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ১০০ বছর ধরে ইংরেজ, জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে অনেক কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। ওই বিদ্রোহগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ, চুয়ার বিদ্রোহ, ওয়াহাবি ও ফরাজী আন্দোলন, কোল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ প্রভৃতি। নিম্নে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে সংঘটিত কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহগুলির কারণ গুলি আলোচনা করা হল -

অত্যধিক রাজস্ব আদায় ঃ ইংরেজ কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করার পর কৃষকদের কাছ থেকে অত্যধিক হারে রাজস্ব আদায় শুরু করে। ফলে শোষিত কৃষকরা কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

সরকারি কর্মচারী ও পুলিশি অত্যাচার ঃ সরকারি কর্মচারী এবং ইংরেজ পুলিশ কারণে অকারণে কৃষক ও উপজাতি মানুষদের উপর অত্যাচার করত। অত্যাচারের ফলে তারা ইংরেজ বিরোধী হয়ে ওঠে।

জমিদার ও মহজনদের শোষণ ঃ জমিদার ও মহাজন শ্রেণীর শোষণ কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল। ইংরেজ কোম্পানি নগদ মুদ্রায় রাজস্ব আদায় করত। মুদ্রা সংগ্রহের নামে কৃষকরা মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হত। এরপর তারা ঋণের জালে পড়ে অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হতো।

বাণিজ্যিক ফসল উৎপাদন বাধ্যবাধকতা ঃ ইংরেজ কোম্পানি জোর করে কৃষকদের দিয়ে খাদ্যশস্যের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ফসল উৎপাদন করাতো। যার মধ্যে প্রধান ছিল নীল, তুলো, পাট, আফিম ইত্যাদি। এর ফলে কৃষকের খাদ্যাভাব ঘটে, ফলে কৃষকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

দেশীয় শিল্পের অবক্ষয় ঃ কোম্পানির আমলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশীয় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী ও কারিগররা কৃষির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। কৃষিতে চাপ বৃদ্ধি পেলে এই শিল্পী ও কারিগররাও কৃষক বিদ্রোহে যোগদান করে।

মিশনারি কর্তৃক ধর্ম প্রচার ঃ খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের জন্য আদিবাসীদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে খ্রিস্টান মিশনারিগণ উপজাতীয় সংস্কৃতির সমালোচনা করত এবং এইসব উপজাতি লোকেদের খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করত। এর ফলে আদিবাসী উপজাতির মানুষেরা ক্ষুব্ধ হয়।

ব্রিটিশ আইন ও বিচার ব্যবস্থা ঃ ইংরেজরা ভারতবর্ষে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার পর ভারতের চিরাচরিত আইন ও বিচার ব্যবস্থা বাতিল করে। পাশাপাশি তারা নিজস্ব আইন ও বিচার ব্যবস্থা চালু করে। ভারতীয় সমাজ এই বিদেশী হস্তক্ষেপকে সুনজরে দেখেনি।

মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, নানা দিক থেকে নেমে আসা শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষক ও উপজাতির মানুষেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। তারা নিজেদের দুর্দশা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ হিসেবে বিদ্রোহকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল।

Post a Comment

Previous Post Next Post