বৈদিক যুগে নারীদের অবস্থা কেমন ছিল

বৈদিক যুগে নারীদের অবস্থা -

বৈদিক যুগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হল ঋকবৈদিক যুগ এবং অপরটি পরবর্তী বৈদিক যুগ। আর বৈদিক যুগ বলতে এই দুই সময়কালকে একত্রে বোঝায়। বৈদিক সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সমাজে নারীদের অবস্থা এবং অধিকার। আর্যদের চারটি বেদ এবং অন্যান্য বৈদিক সাহিত্য থেকে সমাজে নারীদের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। বৈদিক যুগে নারীর অবস্থান সম্পর্কে নিন্মে আলোচনা করা হল -

ঋকবৈদিক যুগে নারীদের অবস্থা - 


     নারীর মর্যাদা ঃ ঋকবৈদিক যুগ সম্পর্কে আমরা স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারি ঋকবেদ থেকে। সুতরাং এই সময়কালে নারীদের অবস্থা কেমন ছিল তাও আমরা ঋকবেদ থেকে জানতে পারি। ঋকবেদ অনুসারে এই সময় সমাজে নারীদের মর্যাদা উন্নত ছিল। পরিবারে পুত্র সন্তানের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। কিন্তু কন্যা সন্তানরা মোটেও অবহেলিত ছিল না। সেই সময় নারীরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করত। 'সভা' নামক শাসন পরিচালক পরিষদে নারীরা তাদের মতামত প্রদান করতে পারত। অনেকের মতে এই সময় পুরুষ যোদ্ধাদের পাশাপাশি নারী যোদ্ধারাও ছিল বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। এই সময় পিতার সম্পত্তির ওপর নারীদের অধিকার ছিল।

     বিবাহ ঃ ঋকবৈদিক যুগে নারীরা বিবাহের ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করতে পারত। বিবাহের ক্ষেত্রে কন্যার মাতাপিতা স্বামী নির্বাচন করলেও নারীরা তাদের ইচ্ছামত স্বামী নির্বাচন করতে পারত। এই সময় সমাজে বিধবাবিবাহের প্রচলন ছিল। বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহের প্রচলন ছিল না বলে জানা যায়।

     জীবন চর্চা ঃ ঋকবৈদিক যুগে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নারীরা বিশেষ অধিকার ভোগ করত। দৈনন্দিন জীবনে নারীরা বিভিন্ন সময়ে অলংকার এবং সাজসজ্জা করত। তারা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এবং নৃত্য-গীতে অংশগ্রহণ করত।

     শিক্ষা ও ধর্মচর্চা ঃ ঋকবৈদিক যুগে নারীদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার ছিল। মন্ত্র রচনার ক্ষেত্রেও তাদের অধিকার প্রদান করা হয়। নারীরা তাদের স্বামীর সাথে বিভিন্ন যাগযজ্ঞ এবং ধর্মাচরণে অংশ নিত। ঋকবৈদিক যুগে বহু শিক্ষিতা এবং 'ব্রহ্মবাদিনী' নারীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এযুগে বেদপাঠ, স্তোত্র রচনা এবং উচ্চ শিক্ষা লাভের দিক দিয়ে পারদর্শিতা দেখিয়েছিল অপালা, ঘোষা, বিশ্ববারার মত বিদুষী নারীরা।

পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীদের অবস্থা -

     ঋকবৈদিক যুগে সমাজে নারীদের অবস্থান উন্নত থাকলেও পরবর্তী বৈদিক যুগে তাদের অবস্থার অবনমন ঘটে। সূত্র সাহিত্য অনুসারে জানা যায় এযুগে সমাজে নারীদের অবস্থা হ্রাস ঘটে এবং বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, পণপ্রথার, সতীদাহ প্রথার মত সামাজিক ব্যাধির জন্ম হয়। ফলে নারীদের অধিকার বিলুপ্ত হয়। এযুগে নারীদের সম্পত্তির অধিকার হ্রাস করা হয়। ঋকবৈদিক যুগে কন্যা সন্তানকে অবহেলা করা না হলেও পরবর্তী বৈদিক যুগে কন্যা সন্তান জন্মের জন্য শোক প্রকাশ করা হয়েছে। এই সময় নারীদের শিক্ষা এবং ধর্মীয় অধিকার হ্রাস করা হয়। এসব সত্ত্বেও এই যুগে গার্গী, মৈত্রয়ী প্রমুখ নারী উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছিলেন।

সবশেষে বলা যায় যে, ঋকবৈদিক যুগের সমাজে নারীরা বিভিন্ন ধরণের অধিকার ও মর্যাদা লাভ করলেও পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীদের সামাজিক অবস্থার অবনতি ঘটে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post