কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র -
জনশ্রুতি অনুসারে কৌটিল্য বা বিষ্ণু গুপ্ত ছিলেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রী। তিনি অর্থশাস্ত্র নামক সুবিখ্যাত গ্রন্থের রচয়িতা। অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটির সঙ্গে দীর্ঘকাল ভারতবাসীর কোন পরিচয় ছিল না। ১৯০৫ সালে মহীশুরের পন্ডিত ডক্টর শ্যাম শাস্ত্রী সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই গ্রন্থটি আবিষ্কার করেন। ১৯০৯ সালে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। নিম্নে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হল -
প্রজাস্বার্থ ঃ কৌটিল্য 'অর্থশাস্ত্র'-এ রাষ্ট্রের তত্ত্ব ও নীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। কৌটিল্য বলেছেন, রাজার কর্তব্য হল প্রচারস্বার্থ রক্ষা করা এবং প্রজা কল্যাণে নিয়োজিত থাকা। প্রজাদের মঙ্গল, সুখ ও সমৃদ্ধি প্রদানের ক্ষেত্রে রাজাকে সক্রিয় থাকতে হবে। অর্থশাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে - "প্রজাসুখে সুখ্যাং রাজঃ, প্রজানাঞ্চ হিতে হিতম"। অর্থাৎ প্রজাদের সুখেই রাজার সুখ, প্রজাদের হিত বা মঙ্গলেই রাজার হিত বা মঙ্গল।
সমাজকে রক্ষা ঃ কৌটিল্য বলেছেন, রাষ্ট্র আসলে সমাজেরই অংশ। সমাজের মধ্যে থেকেই রাষ্ট্রের জন্ম। এই বিচারে রাজার কর্তব্য হল রাষ্ট্রকে রক্ষার মধ্য দিয়ে সমাজকে রক্ষা করা।
দরিদ্রকে সাহায্য ঃ কৌটিল্য বলেছেন, রাজার একটি কর্তব্য হল দরিদ্র লোকেদের সাহায্য করা। কৌটিল্যের ধারণায় দরিদ্ররা সাধারণত লোভী ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অভাবের তাড়নায় তারা রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে। তাই রাজার উচিত হলো ধনী-দরিদ্রের মধ্যেকার ব্যবধান মোচনের চেষ্টা করা।
ন্যায় বিচার ঃ রাজার কর্তব্য হলো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। রাজা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নাগরিকদের রক্ষা করবেন। ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে রাজা নিজ সন্তান বা শত্রুর মধ্যে কোন প্রভেদ করবে না। রাজা চার বর্ণের প্রজাদের প্রতি সমান ব্যবহার করবেন। আইনের চোখে সবাই সমান। রাজা ন্যায়বিচার মেনে অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করবেন।
ধর্মনিরপেক্ষতা ঃ কৌটিল্য -এর অর্থশাস্ত্র হলো ধর্মনিরপেক্ষ প্রশাসনিক তত্ত্ব। এই অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রশাসন পরিচালনার শিক্ষা দেয়।
রাষ্ট্রনীতি ঃ কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রকে রাষ্ট্রনীতির সমার্থক বলে উল্লেখ করেছেন। রাজ্য শাসনের জন্য রাজার যে সমস্ত নিয়মনীতি অনুসরণ করা উচিত তা হলো রাষ্ট্রনীতি। কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রবিদ্যার বিশদ আলোচনা করেছেন। দেওয়ানী, ফৌজদারি ছাড়াও ব্যক্তিগত আইনাবলি অর্থশাস্ত্রে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।