সুযোগের অভাব বলতে কি বোঝ ? বৃদ্ধি ও বিকাশের ক্ষেত্রে যে সকল সুযোগের অভাব গুলি প্রভাব বিস্তার করে তা আলোচনা করো

সুযোগের অভাব বলতে কি বোঝ ? বৃদ্ধি ও বিকাশের ক্ষেত্রে যে সকল সুযোগের অভাব গুলি প্রভাব বিস্তার করে তা আলোচনা করো (What is lack of opportunity ? Write about the lack of opportunities which affect on growth and development ?) -


বৃদ্ধি ও বিকাশের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারকারী সুযোগের অভাবগুলি হল - 

সাধারণভাবে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কিছু মৌলিক অধিকার রয়েছে। যেমন - খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি। এগুলি সে স্বাভাবিক ভাবেই পেয়ে থাকে বা তার পাওয়া উচিত। তাছাড়া ব্যক্তি বেঁচে থাকার জন্য রাষ্ট্র, সমাজ বা পরিবারের থেকে অনেক কিছু আশা করে, যা তার স্বাভাবিক অধিকার। কিন্তু কোন মানুষ যখন এগুলি পায়না বা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তখন তাকে বলা হয় সুযোগের অভাব বা Lack of Opportunity. বিভিন্ন ধরণের সুযোগের অভাবে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয়ে থাকে। যেমন -

পুষ্টির অভাব ঃ যেসব মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে তারা তাদের শিশুর যথাযথ পুষ্টির জোগানে অপারগ হয়। ফলে শিশুর শারীরিক বিকাশ যেমন ব্যাহত হয়, তেমনই অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে ভোগার সম্ভাবনা থাকে। যেমন - রিকেট, রক্তাল্পতা প্রভৃতি। তাছাড়া উপযুক্ত পুষ্টি না কোন শিশু বৌদ্ধিক বিকাশের দিক থেকেও পিছিয়ে থাকতে পারে।

বাসস্থানের অভাব ঃ WHO- এর রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রায় ১৫ মিলিয়ন শিশু অনাথ, যাদের বাসস্থানের কোন অনিশ্চয়তা নেই। ফলে এই ধরণের শিশুদের মানসিক, সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশ যথাযথ হয়না।

সুস্থ পরিবেশের অভাব ঃ সুস্থ গৃহপরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ স্বাভাবিক না হলে শিশুর বিকাশ ব্যাহত হয়। কোন শিশুর গৃহ পরিবেশ যদি সংকীর্ণ, স্যাঁতসেঁতে বা অস্বাস্থ্যকর হয় তাহলে সেই শিশুর দৈহিক বিকাশের ওপর কুপ্রভাব পড়ে। আবার শিশুর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ যদি অনুকূল না হয় তাহলে শিশুর সমস্ত রকম বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।

আর্থিক সুবিধার অভাব ঃ ২০১৩ সালের Planning Commission -এর রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, আমাদের দেশের ৬৭% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে। অর্থাৎ, এই ধরণের মানুষের আয় অত্যন্ত স্বল্প ও এই ধরণের পরিবারে শিশুদেরকে অর্থ উপার্জনের কাজে লাগানো হয়। ফলে এই শিশুদের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক প্রভৃতি সকল দিকের বৃদ্ধি ও বিকাশ বাঁধা পায়।

শিক্ষার অভাব ঃ যেসব পরিবার দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকে সেইসব পরিবারের শিশুদের যথাযথ শিক্ষা লাভ হয় না। ফলে তারা স্বাস্থ্য সচেতন না হওয়ায় বিভিন্ন দৈহিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাছাড়া উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে এইসব পরিবারের শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশ ব্যাহত হয়।

যত্নের অভাব ঃ সুস্থ পরিবেশ, উপযুক্ত পুষ্টির পাশাপাশি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য যথাযথ লালনপালন ও যত্নেরও প্রয়োজন। তবে অনেক পরিবারে মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে শিশুর লালন পালন সঠিকভাবে হয় না। ফলে এই সকল শিশুদের মানসিক বিকাশের পাশাপাশি সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশও সঠিক হয় না।

গ্রহণযোগ্যতার অভাব ঃ সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও একটি শিশুর বিকাশে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যে সব শিশু বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের বা খেলার দলে বন্ধুদের গ্রহণযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত থেকে যায় তাদের ক্ষেত্রে নানা ধরণের মানসিক সমস্যা দেখা যায়। ফলে এই ধরণের শিশুরা অনেক সময়ই হতাশাগ্রস্ত ও অন্তর্মুখী হয়ে পড়ে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post