শিশুর বিকাশে বঞ্চনার প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো (Discuss the effects of deprivation in child development.) OR
টীকা লিখুন ঃ শিশু বিকাশ ও বঞ্চনা (Write a note on child development and deprivation.)
উত্তর ঃ
একটি শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে তার দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক প্রভৃতি দিকের বিকাশ ঘটতে দেখা যায়। বিকাশের সময় যথাযথ চাহিদার পূরণ না হলে বিভিন্ন ধরণের কুপ্রভাব পড়ে। নিন্মে এই প্রভাব গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো -
শৈশবকাল (০-২ বছর) -
দৈহিক বিকাশের ক্ষেত্রে ঃ শৈশবে পিতা-মাতা যদি শিশুকে যথাযথ সময়ে খাবার না দিতে পারে বা শিশু যদি খাদ্যপ্রাপ্তিতে বঞ্চনার স্বীকার হয় তাহলে সেই শিশুর দৈহিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে ঃ শৈশব থেকেই শিশুর মস্তিষ্কের বা জ্ঞানমূলক বিকাশ হতে শুরু করে। এই সময় থেকে শিশু সম্পূর্ণভাবে পিতামাতা নির্ভর হয়ে থাকে।
- ২-৩ বছর বয়সে শিশু তার মা বাবাকে চিনতে শেখে। এই সময়ে কোন শিশু তার আশেপাশে পরিচিত মানুষ দেখতে না পেলে তার ভিতরে এক ধরণের নিরাপত্তাহীনতার অভাব সৃষ্টি হয়।
- শৈশবকালের এই পর্বে শিশুর সঙ্গে তার পিতামাতার সম্পর্ক যথাযথ না হলে তার মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়।
সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে ঃ পরিবারের শিশুরা এই পর্বে শিশুর প্রতি মনোযোগ না দিলে বা শিশু যদি এই সময়ে মনোযোগের চাহিদা থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে শিশুর সামাজিক বিকাশে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
প্রাক্ষোভিক বিকাশের ক্ষেত্রে ঃ শৈশবকালে শিশুর মধ্যে রাগ, ভয় ও ভালোবাসা - এই তিনটি প্রক্ষোভ লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু খাদ্য, নিরাপত্তা ও যত্নের চাহিদা থেকে বঞ্চিত হলে একটি শিশুর মধ্যে থেকে ভালোবাসার প্রক্ষোভটি অবলুপ্ত হয়ে রাগ ও ভয়ের প্রক্ষোভটি অধিক প্রকাশ পায়।
বাল্যকাল (৩-১০ বছর) -
দৈহিক বিকাশ ঃ
- এই পর্যায়ে শিশুর দৈহিক অঙ্গসঞ্চালনের হার বেড়ে যায়। এই পর্বে শিশু খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হলে সেই শিশুর দৈহিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
- এই সময় শিশু খাদ্যের চাহিদা থেকে বঞ্চিত হলে তার শারীরিক দুর্বলতা ও অপুষ্টির লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
মানসিক বিকাশ ঃ
- বাল্যকালে শিশুর মানসিক চাহিদা, যেমন - কল্পনা করার প্রবণতা, সব কিছু জানতে চাওয়ার প্রবণতা ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়।
- এই পর্বে শিশুর জ্ঞানমূলক কাজ থেকে বিরত করা হলে তার জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয়।
সামাজিক বিকাশ ঃ
- সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে সঠিক যোগাযোগের অভাব হলে শিশুর মধ্যে সংকীর্ণতা ও অন্তর্মুখিতার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
- শিশুর সামাজিক অপব্যবহার হলে তার মানসিক অসুস্থতা ও সমাজের প্রতি তার মনে ঘৃণা জন্মাতে পারে।
প্রাক্ষোভিক বিকাশ ঃ
- শিশুর প্রক্ষোভে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে বা তার প্রক্ষোভকে সঠিক গুরুত্ব না দিলে তার মানসিক বিকৃতি ঘটতে পারে।
- এই পর্যায়ে কোন শিশুর প্রাক্ষোভিক বিকাশ সঠিক ভাবে না হলে তার ব্যক্তিত্বের সঠিক হয় না।
কৈশোরকাল (১১/১২-১৭/১৮ বছর) -
দৈহিক বিকাশ ঃ
- এই সময় শিশুর দ্রুত দৈহিক পরিবর্তন হয়। ফলে তার খাদ্যের চাহিদা বেশি থাকে। এই সময় শিশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণ না হলে দৈহিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
- কোন শিশু অঙ্গসঞ্চালনের চাহিদা থেকে বঞ্চিত হলে তার দৈহিক কাঠামো দৃঢ় হয় না।
মানসিক বিকাশ ঃ
- বয়সের এই পর্যায়ে শিশুর স্বাধীনতা খর্ব করা হলে তার মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। ফলে তার স্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতা, সৃজনক্ষমতা লুপ্ত হয়।
- শিশু মানসিকভাবে সমর্থন না পেলে তার মানসিক অসুস্থতা দেখা যায়।
সামাজিক বিকাশ ঃ
- শিশুর বিকাশে এই সময় সামাজিক বিকাশ খুবই জরুরি। কিন্তু এই সময় শিশু সামজিক যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত হলে তার মধ্যে একাকীত্বের জন্ম হয়।
- এই সময়ে শিশুর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বর্জিত হলে তার মধ্যে অপরাধপ্রবণতার সৃষ্টি হতে পারে।
প্রাক্ষোভিক বিকাশ ঃ
- এই পর্বে শিশুর সঠিকভাবে প্রাক্ষোভিক চাহিদা পূরণ না হলে (যেমন - মা-বাবা বা বন্ধুদের কাছ থেকে ভালোবাসা না পেলে শিশু হিংসাত্মক আচরণ করতে পারে) তার প্রাক্ষোভিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
- এই সময়ে শিশু মানসিক আঘাতের সম্মুখীন হলে শিশুর বিভিন্ন মানসিক রোগ হতে পারে।