কৈবর্ত বিদ্রোহের প্রকৃতি -
গণ অভ্যুত্থান ঃ ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার প্রমুখ মনে করেন যে, কৈবর্ত বিদ্রোহ ছিল একটি গণ অভ্যুত্থান। যদিও কৈবর্তরা এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিল। তবুও এই বিদ্রোহে উত্তরবঙ্গের বহু সামন্ত রাজা এবং সাধারণ মানুষের যোগদান করে পাল রাজাদের অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। ফলে বলা যায়, কৈবর্ত বিদ্রোহ গণ বিদ্রোহের রূপ নেয়।
সামাজিক বিদ্রোহ ঃ ডঃ বিনয়চন্দ্র সেন কৈবর্ত বিদ্রোহে একাধারে সামাজিক ও ধর্মীয় উপাদান লক্ষ করেছেন। পাল রাজারা নির্দেশ জারি করেছিলেন যে, মৎস্য শিকারী কৈবর্তরা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করতে পারবে না। এছাড়া পাল রাজারা অহিংস নীতি অনুসরণ করে দেশে মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ফলে কৈবর্তরা সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।
শ্রেণী বিদ্রোহ ঃ ঐতিহাসিক এস পি লাহিড়ী এই বিদ্রোহকে একটি শ্রেণি বিদ্রোহ বলেছেন। কৈবর্তরা রাজ্যপালের সময় থেকে ক্ষমতা লাভে সচেষ্ট হয়েছিল এবং দ্বিতীয় মহিপালের শাসনকালে তারা নিজেদের রাজনৈতিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য বিদ্রোহ করেছিল।
সামন্ত বিদ্রোহ ঃ ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার কৈবর্ত বিদ্রোহকে দুর্বল রাজাদের বিরুদ্ধে একটি সামন্ততান্ত্রিক বিদ্রোহ হিসেবে মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই বিদ্রোহ ছিল পাল সাম্রাজ্যের ভাঙনের একটি বহিঃপ্রকাশ।
উপরিউক্ত মতামত গুলি ছাড়াও ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মা কৈবর্ত বিদ্রোহকে কৃষকদের প্রতিরোধ আন্দোলন বলে মনে করেন। সুতরাং বলা যায় এই বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েই গেছে।